ও নমঃ শ্রীশ্রীগুরবে নমঃ
হে! আমার রাজেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দির! তোমারই বিদ্যাদানে তুমিই আমার নালন্দা। ন+অলম্+দা-বিদ্যদানে তোমার অরুচি নেই, তাই তো তুমি নালন্দা, তাই তো খ্যাতা ও অনিন্দিতা - তাইতো তুমিই আমার রাজ-রাজেশ্বরীমা, জনধন্যা-বিদ্যাদানে তোমার ক্লান্তি নেই; ক্ষান্তি নেই।
সেই তো ৫০ বছর আগে মালডাঙ্গায় তুমিই তোমার সন্তান সেবার ক্রোড় মেলে ধরেছিলে। আজও তেমন ভাবেই তোমার অকৃপন মাতৃ প্রেমের জ্ঞান বিতরণে সর্বধর্ম-উচ্চ-নীচ-ধনী-নির্ধন শক্তিমান-শক্তিহীন, পঙ্গু-সক্ষম সকলকেই তোমার আপন সন্তান ভেবে, অন্ধকার থেকে আলোকের পথে, শিশুত্ব থেকে যৌবনের পথে, যৌবন থেকে পৌঢ়ত্বের পথে, অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের পথে, শক্তিহীনতা থেকে শক্তির পথে যথাযথতা দান করে চলেছো, তাইতো তুমি জ্ঞানদায়িনী মা। ৫০ বছর ধরে সমানে যশ প্রদান করে চলেছো বলেই -তুমিই আমার যশোদায়িনী মা।
মা যেমন, যে সন্তান যা চাই, সেই সন্তানকে তিনি তাই দেন, তাকে তেমন ভাবেই মানুষ করেন। মাগো! তোমার যে সন্তান যেমন করে তোমার কাছে চাইতে পেরেছে, তাকে তেমনই তুমি দিয়েছো। জ্ঞান-অন্বেযুকে তুমি দিয়েছে। জ্ঞান, বিদ্যা প্রার্থীকে দিয়েছো বিদ্যা, ব্যবসায়ীকে দিয়েছো-ব্যবসায়ীত্বিকা বুদ্ধি, ক্রীড়া প্রেমীকে দিয়েছো ক্রীড়াকুশলী বিদ্যা, আবার চিকিৎসা প্রেমীকে দিয়েছো চিকিৎসাবিদ্যা। কখনও শিল্পীর কাছে মেলে ধরেছো শৈল্পিক নৈপুন্য, কারিগরীকের কাছে দিয়েছো কারিগরী বিদ্যা। তুমিই তো দেখছি আমার সর্বদায়িনী মা। তোমার অদেয়তো কিছুই নেই। তাই তোমার তুলনা শুধু তুমিই।
আবার তোমারই দেয় বিদ্যার অঙ্কুর থেকে যোগী পেতে পারে যোগবিদ্যা, তাত্ত্বিক পেতে পারে তত্ত্ববিদ্যা, আত্মতত্ত্ব জিজ্ঞাসুকে তুমিই দিতে পারো আত্মজ্ঞান, পরা-অপরার মিটাতে পারো বিভেদ, প্রকৃতি-পরাপ্রকৃতির ঋষিবিদ্যার আশ্রয়-স্কুলের প্রথম সোপান তোমারই তো, সে ইচ্ছায় তুমিই হতে পারো মা সহায়।
তুমিই সকলকে একই মানবপ্রেমে মেশাচ্ছো, মেলাচ্ছো সর্বসমন্বয়ের ক্ষেত্রভূমি তো তুমি মা। তাইতো মা, তোমার দাক্ষিণ্যগুণের, দাক্ষিণ্য-জ্ঞানের ও ঔদার্য্যগুণের প্রসারতা প্রার্থনা করি মা।
তুমিই তো সংসার পালয়িত্রী মা। কুশলীর তুমি কুশলীবিদ্যা। জীবন নদীর মাঝির তুমি বৈঠাবিদ্যা, কৃষকের তুমি কৃষিবিদ্যা, শ্রমিকের তুমি শ্রমবিদ্যা। ওগো আমার বিদ্যাদায়িনী মা তুমিই তো বিশ্বপ্রেমে বিগলিতা।
আবার শুধু তুমিই আমার অগণিতা শিশুরই পালিকা নও আমারও রক্ষয়িত্রী; মানদাত্রী, জীবনের পূর্ণতাদায়িনী। নিজেকে বিকশিত করার দেয় সর্বশক্তিরূপিনী মা। তুমিই তোমার অনন্ত অসীম দয়ার হস্ত প্রসারিত করে আমাকে ঠাঁই দিয়েছো বলেই আজও আমি এখানে শুধু শেখায়ইনা নিজেও শিখি। আমার নিজের অপূর্ণতার পূর্ণায়ণে তুমিই মা আমার। একান্ত আপনজন। সকলের গোচরে, অগোচরে নিভৃতে আমারই অন্তরে অন্তঃসলিলা হয়ে আমাকেই প্রতিনিয়ত শেখাচ্ছো। তোমার সেবাকর্মে আমাকে নিয়োজিত করে, অবিদ্যা-নাশে আমার যশখ্যাতি, সর্বঅহং বিবর্জিত করে আমার ব্রনপূর্ণ মলিন মনকে, পূর্ণ আলোক উত্তরণ এর পথে নিয়ে চলো মা-কারণ তুমিই তো আমার ভবতারিনী জ্ঞানদায়িনী জ্ঞানদা।
তাইতো ৫০ বৎসর পূর্তিতে তুমি তোমার বিদেশ-বিভু'য়ে থাকা, সকল ছেলেকে কাছে পাবার আনন্দে নতুন করে সেজেছো-অতসীবর্ণে তোমারই পবিত্র অঙ্গণে। তুমিই আমার অতসী মা-অনন্যা। তুমিই হওমা আমার সকল জীবের হুর্গতিনাশিনী দুর্গা, তুমিই হওমা কালজয়ী-আনন্দ দায়িনী বিদ্যাদায়িনী নিকেতনী মালডাঙ্গা রাজেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যা নিকেতনী মা। তোমার মাতৃপূজার আরাধনায় পরিস্থিতি, অপরিস্থিতি আমার চাওয়া-পাওয়ার শ্রেয়, প্রেয়-র পথে যদি আমার বসনব্যসণ ছিন্নও হয় তথাপি যেন ক্লান্তিতে ক্ষান্তি না দিই।
কালের নিয়মে সকলের মত তোমার সন্তান একদিন বিদায় নেবে। সেদিনও যেন আজিকের মত প্রকৃত মায়ের ভূমিকায় তোমাকে রেখে শ্রদ্ধা-বনত:- থাকতে পারি এ মিনতী তবপদান্বজে। হে! আমার জ্ঞানবৃক্ষের ফলস্বরূপা নিকেতনী-দয়াবতী মা। তুমিই যুগে যুগে জ্ঞানবৃক্ষের ফল-বিতরণে হয়ে ওঠো আমার, সকলের সাধনপীঠের মোক্ষদা।
-তাই বলি, ওগো আমার নিকেতনী মা, ঢাকায় যেমন তুমি হও, ঢাকেশ্বরী, বৃন্দাবনে বিন্দেশ্বরী আর মালডাঙ্গায় হও মা তেমনি চির-অম্লান-জ্যোতির্ময়ী বিদ্যাদায়িনী রাজ রাজেশ্বরী। হে! আমার রাজ রাজেশ্বরী জীবনের প্রাণেশ্বরী মা; দাও আমায়, একটা প্রত্যাশা করা চৈতন্যের সকাল।